সিবিএন ডেস্ক:

সরকার কক্সবাজারের দুই প্রতিষ্ঠানের নামে দেওয়া ৮৫৬ একর বনভূমির দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জমির মধ্যে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে ১৫৬ একর এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে ৭০০ একর বনভূমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছিল। বন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আপত্তির প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা মূলত জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ সুরক্ষার অংশ হিসেবে গৃহীত হয়েছে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “দেশে বনভূমির সংকট রয়েছে, তাই যা আছে তা রক্ষা করতে সাংবিধানিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ সরকার।”

ঘটনা ও প্রেক্ষাপট:

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ভাই, শহীদ এটিএম জাফর আলম (প্রয়াত)-এর নামে ২০১৬ সালে কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়াপালং মৌজায় ১৫৫.৭ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৭৭ লাখ ৭ হাজার ১৫০ টাকা, কিন্তু প্রতীকী মূল্যে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৭১৫ টাকা বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। পরে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি রাখা হয়।

অন্যদিকে, ২০২১ সালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের পাশে ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর বনভূমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। জমির বাজারমূল্য ছিল ৪৮০৩ কোটি ৬৪ লাখ ২৩ হাজার ৬০০ টাকা, কিন্তু একাডেমির জন্য মাত্র ১ লাখ টাকায় এটি বরাদ্দ করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, এই জমি কক্সবাজারের অন্যতম জীববৈচিত্র্যপূর্ণ বনভূমি হিসেবে পরিচিত এবং পরিবেশ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী এটি রক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষিত।

বনভূমি রক্ষার উদ্যোগ:

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাকে ২১ ও ২৯ আগস্ট পৃথক চিঠি দিয়ে এই জমির বন্দোবস্ত বাতিল ও রেকর্ড সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ উদ্যোগের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে বনভূমি রক্ষা এবং কক্সবাজারের সংরক্ষিত জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখার গুরুত্বকে তুলে ধরা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে ঝিলংজা মৌজার ৭০০ একর বনভূমিসহ কক্সবাজারের বেশ কিছু এলাকা “প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করা হয়, যেখানে কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ বা পরিবেশের ক্ষতি করে এমন তৎপরতা নিষিদ্ধ। তবুও ২০২১ সালে এই বনভূমিকে “অকৃষি খাসজমি” হিসেবে দেখিয়ে ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া:

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “এই বনভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো গাছপালা এবং বন্য প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয় রয়েছে, বিশেষ করে মহাবিপন্ন প্রজাতির এশীয় বন্যহাতির একটি দল নিয়মিত সেখানে বিচরণ করে।” তিনি উল্লেখ করেন, কক্সবাজারের জীববৈচিত্র্যের জন্য এই বনভূমি রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবেশ সংরক্ষণ এবং বনভূমি রক্ষার উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা দেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সুত্র: সমকাল